জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুল্থানে ছড়রা গুলির স্পিল্টারে চোখের আলো হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের সাইদুল মৃধা (২৫)। সাইদুল ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও দুর্ঘটনার পর স্ত্রী পান্না আক্তার আর দেড় বছরের একমাত্র কন্যা সুমাইয়াকে নিয়ে চলে আসেন গ্রামের পৈত্রিক ভিটায়। কর্মক্ষমতা না থাকায় স্ত্রী পান্না আক্তার কর্মহীন স্বামী সাইদুলকে তালাক দিয়ে চলে যান। জীবন সংগ্রামে বিপর্যস্ত সাইদুলকে তার জীবিকা নির্বাহের জন্য ইংরেজী একটি পত্রিকার ঢাকার জনৈক এক পাঠক তাকে একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা উপহার দিয়েছেন।
রবিবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডেইলি স্টারের পটুয়াখালী প্রতিনিধি এ্যাড. সোহরাব হোসেন সাইদুলের হাতে চাবি দিয়ে রিক্সাটি তুলে দেন। এ সময় সাইদুলের দাদা মো. হাশেম মৃধা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি, সাইদুলের বিপর্যস্ত জীবন নিয়ে দি ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ঢাকার এক পাঠকের দৃষ্টিতে পড়ে। তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে সাইদুলের সাথে যোগাযাগ করে সাইদুলের চাহিদা অনুযায়ী একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা উপহার দেন। রিক্সাটি হাতে পেয়ে সাইদুল আবেগ আপ্লুত হয়ে হৃদয়বান দাতা ব্যক্তিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, "দুঃসময়ে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের প্রতি শুভকমনা। এখন আমি রিক্সাটির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো। সাংবাদিকদের কারনে আমি রিক্সাটি পেয়েছি। আমি সাংবাদিকদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। সাংবাদিকদের জন্য সমাজে আজও মানবতা আছে।
সাইদুল বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ মৃধার ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাইদুল সবার বড়। অভাবের সংসারে বেশিদূর পড়াশুনা না করতে পারা সাইদুল ঢাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সাইদুল জানান, আমার দুঃসময় দেখে স্ত্রী পান্না আক্তার তাকে তালাক দিয়ে দেড় বছরের একমাত্র মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে চলে গেছেন। তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছড়রা গুলিতে বাম চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বহু স্পিল্টার বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। ওই সময় আন্দোলনে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে এক সপ্তাহ ভর্তি থাকার সময় তার চোখ থেকে স্পিল্টার বের করা হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেন তিনি। সেখানে তার চোখে অপারেশন করা হলেও তার বাম চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।