সাউথ বিডি নিউজ ২৪ ডেস্কঃ ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ২৯ মে (বুধবার) অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে পটুয়াখালী সদরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও সমর্থনে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কে কার পক্ষে সমর্থন দিয়ে কাজ করবেন এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন তৃণমূলের অনেক সাধারণ কর্মী। তবে ইতিমধ্যে চার প্রার্থীর পক্ষেই প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এর বেশকিছু নেতৃবৃন্দ। তাই, এই নির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াইয়ের একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্রত্যেক প্রার্থীরই রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা, রয়েছে ভোট। নির্বাচনী মাঠে আর প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই কেউ। বিএনপি এ নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচনী মাঠ রয়েছে সরগরম।
জানা যায়, মটর সাইকেল মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ গোলাম সরোয়ার। তার পক্ষে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুস ছালাম, জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য এ্যাড. মোঃ জাফর আহমেদ (জাফর উকিল), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক বিএম শাহজাহান পারভেজ (শাহজাহান ভূইয়া), জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ মাহমুদুল হাসান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মনোয়ার হোসেন ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ সহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ।
এ্যাড. মোঃ গোলাম সরোয়ার সম্পর্কে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বলেন, “এ্যাড. গোলাম সরোয়ার একজন সৎ, যোগ্য এবং শিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি বদরপুর ইউনিয়ন এর দুবার চেয়ারম্যান ছিলো, তার কোনো বদনাম নাই। সদর উপজেলা পরিষদ এর ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলো, সেখানেও কোনো বদনাম তার হয় নাই। এ্যাড. গোলাম সরোয়ার ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আজ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। রাজনীতির মাঠেও তিনি একজন ক্লীন ইমেইজের মানুষ। তিনি সদর উপজেলার ১৭ টি বিভাগ যথাযথভাবে তদারকি করে উপজেলাকে সুন্দরভাবে চালিয়েছে। এ কারনেই আমি তাকে যোগ্য মনে করি এবং ২৯ তারিখ নির্বাচনে মানুষ আবারও এ্যাড. গোলাম সরোয়ারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
কাপ-পিরিচ মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ (কালাম মৃধা)। তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. হারুন-অর-রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সরদার সোহরাব হোসেন, আওয়ামী যুবলীগ পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোঃ সোহেল, সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহনুর হক সহ বেশ কিছু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
আবুল কালাম আজাদ (কালাম মৃধা) সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. মোঃ হরুন-অর রশিদ বলেন, “কালাম মৃধা একজন নীতিবান এবং ভালো মনের মানুষ। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালীন কোনো অন্যায় করেননি। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সালিশ-ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু কোনো পক্ষপাতিত্ব করেননি। আমি তাকে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন যোগ্য প্রার্থী মনে করি এবং আশা করি সদর উপজেলার মানুষ তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে।”
এদিকে আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান মনির খান। তার পক্ষে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. শাহিন মিয়া, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালমা জাহান, দপ্তর সম্পাদক মোঃ আবুবকর মাদবর, সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক মোঃ কালাম তালুকদার এবং সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুল ইসলাম সহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এর বেশকিছু নেতাকর্মী।
মোঃ মিজানুর রহমান মনির খান সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. শাহিন মিয়া বলেন, “আমি আনারস মার্কার প্রধান এজেন্ট। আমি মনে করি মনির খান এর আনারস মার্কার সাথে অন্য প্রার্থীর প্রতিযোগিতা হবে তাতে যার সাথে হোক। মিজানুর রহমান মনির খান দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। বিয়ের অনুষ্ঠান, মাহফিল, খেলাধুলা এমনকি হিন্দুদের যেকোনো অনুষ্ঠানে মনির খান উপস্থিত থেকেছেন, সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন। তিনি অসুস্থ মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। তাই আমি মনে করি মিজানুর রহমান মনির খান একজন যোগ্য প্রার্থী এবং গ্রামের সাধারণ মানুষ তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।”
অপরদিকে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা মোঃ রেজাউল করিম সোয়েব। তার সাথে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান খান, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক একেএম খায়েরুল আহসান খায়ের, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন ও জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি উজ্জ্বল সিকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহাবুব শিবলীসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক একেএম খায়েরুল আহসান খায়ের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয় নাই। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন করছে না, সেহেতু প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কা না দিয়ে এবং কোনো প্রার্থী না দিয়ে তিনি তার দলের যোগ্য প্রার্থী দেখতে চাচ্ছেন। যারা সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের। কিন্তু আমি সোয়েব এর পক্ষে নেমেছি কারণ ছেলেটা সৎ। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে আসছে। তার কোনো কলঙ্ক নাই। তার কোনো বদনাম নাই। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন সোয়েব ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। সে একটা সৎ পরিবারের সন্তান। মানুষের সেবায় সোয়েব একটি নিবেদিত প্রাণ, মানবতার মূর্ত প্রতীক। তাই, আমি শতভাগ আশাবাদী মানুষ সোয়েবকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও দেখা গিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। কেউই নিশ্চিত নন যে কে হতে হতে যাচ্ছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ এর পরবর্তী ৫ বছরের জন্য চেয়ারম্যান। তাই তারা অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের পরবর্তী চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে। তবে, একজন যোগ্য এবং কর্মঠ ব্যক্তি তাদের চেয়ারম্যান হোক এমনটাই তাদের প্রত্যাশা।