জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই এক নিরীহ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে হামলা-ভাংচুর, লুটপাট ও নারীদের মারধর, বাড়িঘর ছেড়ে দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে ও জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবীতে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ আশরাফ।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ সরকার ও দেশ যখন নতুন স্বাধীনতায় ভাসছে তখন ব্যক্তিগত রোশানলে সাইফুল ইসলাম মৃধা ও রিমানুল ইসলাম রিমুর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী আনুমানিক ৬.৪৫ মিঃ সময় আমার বাড়ীতে ঢুকে আমার নিজ বসত ঘর ও আমার ভাড়াটিয়ার ৬টি বিভিন্ন কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটারের গোডাউন ঘর ভাংচুর করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা আমার বৃদ্ধ মা শেফালী বেগমকে মারধর করে তার হাত ভেঙ্গে রক্তাক্ত ফুলা জখম করে আমাদেরকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। উক্ত সন্ত্রাসীরা ফের রাত আনুমানিক ১১ টা ৩৭ মিঃ এর সময় আমার ৪টি কোম্পানির গোডাউনের তালা ভেঙ্গে এবং ক্যাশে থাকা নগদ টাকা-পয়সা ও বাসার ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসী হামলা ও ভাংচুর করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় রাত আনুমানিক ১ টা ৪৫ মিঃ এর সময় পটুয়াখালীতে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর মোবাইলে ফোনে অবহিত করায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলামের ঘর তল্লাশী করেন। তাকে না পেয়ে সেনা সদস্যরা আমাদেরকে ধৈর্য ধরার শান্তনা দেন এবং পরবর্তীতে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমি বাদী হয়ে সিসি ফুটেজে সনাক্ত করে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ৩ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী বিজ্ঞ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে মো. সাইফুল মৃধা (৪০), মাহাবুব(২০) ও তানভীর(২০) সহ ৩০/৪০ জন আসামী করে একটি এবং বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাইফুল মৃধা(৪০), সুমন মৃধা(২২), মনির হোসেন(৩০), মো. রাসেল(২৫), লিমন(২৬), সোহাগ(২৫)সহ ১৩ জনকে চিহ্নিত করে ৪০/৫০ জন উল্লেখ করে ২টি মামলা দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত ২টি মামলাই সদর থানার ওসিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এফআইআর হিসেবে গ্রহন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অদ্যবধি মামলা দুটি এজাহারভুক্ত না করে অজ্ঞাত কারনে বিলম্ব করছেন। কোর্টে মামলা করার খবর শুনে সন্ত্রাসীরা আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্থ ফিরোজ আশরাফ আরো বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারি সন্ত্রাসীরা সবাই যুবদলের নেতা- কর্মী। সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলে, না গেলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী ফিরোজ আশরাফ। সংবাদ সম্মেলনে ফিরোজ আশরাফ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাতে সাধারণভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন তার জন্য সিসি ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন।
মামলা দুটি এফআইআর না করার সম্পর্কে সদর থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান, ব্যস্ত থাকার কারনে এফআইআর করতে বিলম্ব হচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফিরোজ আশরাফের বৃদ্ধ পিতা আঃ খালক মৃধা, মাতা- শেফালী বেগম, স্ত্রী-সায়িদা আক্তার সুরমা, বোন-সালমা জাহান, ৮ বছরের শিশু পুত্র শাওম ও দেড় বছরের শিশু কন্যা রোজাসহ অন্যান্য স্বজনরা। এ পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান ফিরোজ আশরাফ।