মু. হেলাল আহম্মেদ (রিপন), পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ব্রীজ সংলগ্ন ৭ নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান বাড়ী সড়কের বাসিন্দা শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মো. শাহ আলম আকন (৫২) এর পৈতৃক সম্পত্তি শালিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাইয়ে দেয়ার নামে ১২ শতাংশ এবং নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরও ১৩ শতাংশ মোট ২৫ শতাংশ জমি কোনো টাকা পয়সা না দিয়ে দলিল নিলো পটুয়াখালী ছোট চৌরাস্তার মৃধা বাড়ির প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী বাদশা মৃধার ছোট ভাই প্রভাবশালী ভূমিদস্যু, বালু সিন্ডিকেট ও ড্রেজার ব্যবসায়ী বাহাদুর মৃধা।
গত ৩ দিনের সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শাহ আলম ইটবাড়িয়া ইউপির মৃত খোরশেদ আকনের ছোট ছেলে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার পিতার রেখে যাওয়া পৈতৃক সম্পত্তি স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের রোষানলে পরে প্রতিবন্ধী নিজ জমি থেকে বে-দখলে আছেন। এ নিয়ে স্থানীয় সালিশ দরবার চলেছে বহুবছর। বিষয়টি নজরে আসে বাহাদুর মৃধার। এসময় প্রতিবন্দী শাহ আলমকে টার্গেট করে তার সদর হাসপাতাল সংলগ্ন পানামার পাশে প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দোতলায় তার চেম্বারে এনে প্রতিবন্দীর জমি পাইয়ে দেয়ার নামে ১২ শতাংশ জমি পটুয়াখালী সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিল করে নেন। এবং দুই ভাই নুরুল ইসলাম আকনব(৭০) ও শাহ আলম (৫২) এবং এক বোন মোসা. আছিয়া বেগম (৪৫) এর কাছ থেকে নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরো ১৩ শতাংশ মোট ২৫ শতাংশ জমি কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে লিখে নেয় এই ভূমিখেগো বাহাদুর মৃধা।
এদিকে গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রতিবন্দ্বী শাহ আলম গাছ থেকে পরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ৩৪ নম্বর বেড এ। প্রতিবন্দ্বীর স্ত্রী টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না বলে জানান সংবাদ কর্মীদের।
গণমাধ্যমকর্মীরা এ তথ্য পেয়ে পটুয়াখালী সমাজ সেবা অফিসকে জানালে অফিসের এক তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা মো. সেলিম বিষয়টি অবহিত হয়ে ছুটে যান সদর হাসপাতালে। এ সময় সমাজ সেবা অফিসের কর্মকর্তা মো. সেলিম মজুমদার সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সাধ্যমত সহায়তা প্রদান করেন এবং ৩৪০০ টাকার ঔষধপত্র ও টেষ্ট সম্পন্ন হয়।
ভুক্তভোগী প্রতিবন্দ্বী শাহ আলম আকন দৈনিক বরিশাল সমাচারকে বলেন, “আমার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি আমরা পূর্বে থেকেই খাইতে পারতাম না। এই বাহাদুর মৃধা আমাগো সম্পত্তি বের করে দেয়ার নামে অগ্রীম লিখে নিয়েছে ২৫ শতাংশ।” কে কে দলিল দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি, আমার বড় ভাই নুরুল ইসলাম আকন ও বোন আছিয়া বেগমসহ আমরা তিনজনে দলিল দিয়েছি। প্রথম আমারে খালি ৮০ হাজার টাকা দেছে। পরে আমাদের আর কোন টাকা-পয়সা দিচ্ছে না। আমি হাসপাতালে ভর্তি। বউ টাকার জন্য বার বার ফোন দিলেও বাহাদুর মৃধা ফোন রিসিভ করে না। আমরা এর সুক্ষ বিচার চাই।” এ ব্যপারে সদর থানায় কোন অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মোরা কোনো থানা পুলিশ করি নাই।”
প্রতিবন্দ্বীর বড় ভাই নুরুল ইসলাম আকন (৭০)
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, “আমাগো বাপ দাদার সম্পত্তি টাকার বিনিময়ে লেইক্ষা নিছে বাহাদুর মৃধা। কিন্তুু ৫/৬ মাস হইয়া গেছে এখন পর্যন্ত একটা টাকা আমাগো দেয় নাই। আমরা তিন ভাই বোনে দলিল দিছি সরল বিশ্বাসে। আমি কামকাইজ কইরা খাই, বয়স হইয়া গেছে, এখন কাজ ও করতে পারি না। মোগো জমি এ-ই রহম ভাবে নিলো আল্লাহ সইবে না।”
এ ব্যপারে একই বাড়ির মোসাঃ হেলেনা বেগম জানান, “আমাগো বাড়ির প্রতিবন্দ্বী শাহ আলম এর জমি সব লেইক্ষা নেছে। বিনিময় কোন টাকা-পয়সা দেয় নাই।” কে লিখে নিয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “চৌরাস্তায় বাড়ী বাহাদুর মৃধা টাহা-পয়সা না দিয়া লেইক্ষা নেছে।”
এ বিষয়ে বাহাদুর মৃধার মুঠোফোন (০১৭১২-২৮৭৮৫৭) নম্বরে উপরে উল্লেখিত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টাকা আমি সব দিয়ে দিয়েছি। এক টাকাও তারা আমার কাছে পাইবেনা। এ ব্যপারে চেম্বার অব কর্মাস থেকে ফোন এসেছিলো। আমি অসুস্থ, তাই সুস্থ হয়ে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে চেম্বার অব কমার্সে বসে ফয়সালা দিবো”
উক্ত ঘটনার ব্যপারে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দিন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, “এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”